মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সাংবাদিক নুরুল ইসলাম আর নেই
লন্ডন, ১৫ জানুয়ারি – মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য এবং ‘প্রবাসীর কথা’ বইয়ের লেখক, বাংলা একাডেমির ফেলো, সাংবাদিক ও গবেষক নুরুল ইসলাম আর নেই। লন্ডনের একটি হাসপাতালে ১১ জানুয়ারি মঙ্গলবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি… রাজেউন)। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়ে, নাতি-নাতনি, আত্নীয়-স্বজনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। নুরুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে নানা রোগে ভুগছিলেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। গত ২৭ ডিসেম্বর থেকে নুরুল ইসলাম চিকিৎসকদের নিবিড় পরিচর্যায় ছিলেন। সিলেট সদর উপজেলার হাদারখোলা গ্রামের মরহুম হাজী মুবশ্বির আলী এবং শিক্ষিকা মরহুম নুরুন্নেছা চৌধুরীর বড় ছেলে নুরুল ইসলামের বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের ইতিহাস বিস্ময়ের। দেশের জাতীয় ইস্যু রাজনীতি, শিক্ষা, সাহিত্য, সাংবাদিকতা, প্রবাসীকল্যাণসহ নানা ক্ষেত্রে তাঁর উপস্থিতি ছিল বিশেষভাবে উল্লেখ করার মতো।
উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধ ছাড়াও যুক্তরাজ্যে বাঙালি কমিনিউটির বিভিন্ন উন্নয়নমুলক কাজে নুরুল ইসলামের অবদান ছিল। তিনি যুক্তরাজ্যের ঐতিহ্যবাহী সংগঠন বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি, যা পূর্বে পাকিস্তান ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন নামে ছিল ও পাকিস্তান ক্যাটারার্স এসোসিয়েশন, যা বর্তমানে বাংলাদেশ ক্যাটারার্স এসোসিয়েশন নামে পরিচিত। এছাড়া তিনি সিলেটে ওভারসিজ সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা ও সিনিয়র কো-অর্ডিনেটরের দায়িত্ব পালন করেন। ন্যাশনাল ফেডারেশন অব পাকিস্তান এসোসিয়েশন ইন ইউকের ফাউন্ডার জেনারেল সেক্রেটারি ছিলেন তিনি। এছাড়া তিনি ব্রিটেন ও বাংলাদেশের আরও বহু সংগঠনের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি ১৯৭১ সালে সেক্টর ৪ এ মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং যুগোস্লাভিয়া সফর করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য সমর্থন বাড়াতে। ১৯৭১ সালে দেওয়ান ফরিদ গাজীর একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১-৭২ সালে স্বাধীনতার পর তিনি প্রশাসনিক সচিব ছিলেন। ২০১২ সালে তাঁকে তাঁর বই প্রবাসীর কথা লেখক হিসাবে সসম্মানে বাংলা একাডেমির ফেলোশিপ দেয়া হয়। গবেষণা গ্রন্থ প্রবাসীর কথা’র অসামান্য অবদান রয়েছে বিশ্ব অভিবাসনের ক্ষেত্রে। ২০১৩ সালে অভিবাসনের ওপর তাঁর দ্বিতীয় গবেষণা বই Sojourners to Settelers: The Tales of Immigrants সম্পন্ন করেছেন। বইটি বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর মৃত্যুতে দেশ ও প্রবাসের অগুনতি সংগঠন, বিশিষ্ট ব্যক্তি শোক ও সমবেদনা জানিয়ে বিবৃতি প্রদান করেছেন।
এম ইউ/১৫ জানুয়ারি ২০২২