অপরাধ

কানাডায় টাকা পাচারে সরকারি প্রকৌশলীরা শীর্ষে

স্থানীয় প্রকৌশল বিভাগের একজন প্রকল্প পরিচালক ছিলেন তিনি। চাকরি থেকে অবসরের পর চলে গেলেন কানাডায় এবং সেখানেই তিনি স্থায়ী ভাবে বসবাস করছেন। কানাডায় তার তিনটি বাড়ির খবর পেয়েছে সরকার। বিদেশের ব্যাংকে তার গচ্ছিত রয়েছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। সরকার এখন বিদেশে কারা টাকা পাচার করেছে এবং কারা কারা সুইস ব্যাংকে একাউন্ট করেছে এর হিসেব কষছে। আর হিসেব কষতে গিয়ে বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

সরকারি কর্মকর্তারাই বিদেশে টাকা পাচার করার শীর্ষে রয়েছেন । আর সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা বরং সরকারি প্রকৌশলীরা সবচেয়ে বেশি বিদেশে বাড়ি করেছেন এবং টাকা পাচার করেছেন। বিদেশে টাকা পাচারের যে প্রাথমিক তথ্য সরকারের হাতে এসছে, তাতে দেখা যাচ্ছে যে সরকারি প্রকৌশলীরাই এব্যাপারে সবাইকে হারিয়ে দিয়েছে। সরকারি প্রকৌশলীরাই গণপুর্ত বিভাগে,সড়ক অধিদপ্তর বিভাগ এবং স্থানীয় প্রকৌশল বিভাগসহ আরো কয়েকটি জায়গায় চাকুরী করেন। এসমস্ত সরকারি প্রকৌশলদের জীবন-যাপন যে কোন ব্যবসায়িক জীবন-যাপনকেও হার মানায়। তবে এই বাহ্যিক আবরনের বাইরে বিদেশে তাদের যে অর্থ-সম্পদ বিত্ত বৈভব তা যেন সবাইকে হার মানিয়ে দিয়েছে।

আরও পড়ুন : সাবেক প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দিন আহমেদ মাত্র ৩০০ কোটি টাকা পাচার করেছেন

সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে, এখন পর্যন্ত প্রাথমিক হিসেবে দেখা যে ২৩২ জন সরকারি প্রকৌশলী বিদেশে অর্থ পাচার করেছেন। এসম্স্ত প্রকৌশলীদের সিংহ ভাগই অবসর গ্রহণের পর সর্বোচ্চ এক থেকে দেড় বছর দেশে অবস্থান করেছেন, তারপর তারা সপরিবারে বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, বাংলাদেশে যারা সরকারি প্রকৌশলী কাজ করছে তাদের সন্তানদের প্রায় ৪০ শতাশংই বিদেশে লেখাপড়া করে।

এই অর্থ কিভাবে আসে, কিভাবে তারা তাদের সন্তানদের বিদেশে লেখাপড়া করাতে পারেন সে নিয়ে আরো গবেষণা হওয়া দরকার বলে জানা গেছে। টিআইবির একজন কর্মকর্তা বলেছেন, বাংলাদেশে সরকারি বিভিন্ন খাতে নিয়োজিত প্রকৌশলীদের দুর্নীতির অনেক তথ্যই আমরা পাই। এসমস্ত তথ্যগুলো প্রশাসন ক্যাডারের দুর্নীতির চেয়েও ভয়াবহ। গত ১২ বছরে বাংলাদেশে উন্নয়নের অভিযাত্রা হচ্ছে, বড় বড় বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প, পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল প্রকল্পসহ সারা দেশে আজ উন্নয়নের জোয়ার।

আরও পড়ুন : কানাডায় সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব আব্দুল হালিমের হাজার কোটি টাকার সম্পদ

আর এ সমস্ত উন্নয়নের একটি বড় অংশই হলো অবকাঠামো উন্নয়ন। আর অবকাঠামো উন্নয়নে যখনই কথা হচ্ছে তখনই প্রকৌশলীদের কথা উঠছে। আর এ সমস্ত উন্নয়ন খাতের যে বাজেট, সে বাজেটগুলো ফুলে ফেপে বড় হচ্ছে প্রকৌশলীদের দুর্নীতি এবং সেচ্ছাচারিতার কারণেই। কোন প্রকল্প শুরু করার আগেই সে প্রকল্পের ব্যায় প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায় প্রকৌশলীদের অনুমোদনে। যেহেতু এসব অবকাঠামো নির্মাণগুলো এক ধরনের কারিগরি কাজ । কাজেই এসমস্ত কাজে চ্যালেঞ্জ করা যায় না। ফলে বাংলাদেশের এসমস্ত সরকারি প্রকৌশলীরা কোন একটা প্রকল্পের প্রধান হলে বা কোন একটা বিভাগের প্রকল্প প্রধান প্রকৌশলী হলেই তাকে আর সারাজীবন কিছু চিন্তা করতে হয় না।

সারা জীবন কেন? তার সন্তান-সন্তানতিদেরকেও সারা জীবন আর চিন্তা করতে হয় না। অথচ প্রকৌশলীরা যেহেতু ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকনে না, তাদের নিয়ে আলোচনা কম হয় সে কারণে তাদের যে দুর্নীতির বিষয়টি উহ্য হয়ে যায়। এখন যখন সরকারী কর্মকর্তাদের ‘বেগম পাড়ায়’ অর্থের কথা বলা হচ্ছে তখন কেঁচো খুড়তে যেয়ে সাপ বেরোচ্ছে। দেখা যাচ্ছে টাকা-পয়সার দিক থেকে প্রকৌশলীরা অনেক বেশি ক্ষমতাবান।

এন এ/ ৩০ নভেম্বর

Back to top button