বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী দ্বৈত নাগরিকরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন না। তবে অন্য দেশের নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করলে এবং প্রমাণ দেখাতে পারলে নির্বাচনে অংশ নিতে বাধা থাকে না। গত দ্বাদশ নির্বাচনে দ্বৈত নাগরিকের অভিযোগ পাওয়া চার প্রার্থীর মনোনয়ন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু দ্বৈত নাগরিকের অনেকেই নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন! জানা গেছে, অসাধু নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে তারা বৈধতা নিয়েছিলেন; আদতে তারা অন্য দেশের নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করেননি; তারা কমিশনে মিথ্যা তথ্য তথা ভুয়া প্রমাণপত্র জমা দিয়ে কার্য সিদ্ধি করেছেন।
বাংলাদেশে দ্বৈত নাগরিকের ক্ষেত্রে যে আইন রয়েছে তা সুনির্দিষ্ট নয়। সংবিধানেও আলাদা ভাবে কিছু বলা হয়নি। কেবল বলা আছে অন্য দেশের নাগরিকত্ব প্রত্যাহার করতে হবে এবং সেই প্রত্যাহারের আবেদন ওই দেশে গৃহীত হওয়ার প্রমাণ থাকতে হবে। অনেকে প্রমাণ হিসেবে মেয়াদ উত্তীর্ণ পাসপোর্ট দেখিয়ে নির্বাচন কমিশনকে বিভ্রান্ত করেছেন।
সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কেউ যদি নাগরিকত্বের বিষয়ে মিথ্যা তথ্য দেয় তাহলে পাঁচ বছরের জেল কিংবা এক লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। কিন্তু আমাদের দেশের নির্বাচন কমিশন কখনও বিষয়টি আমলে নেয়নি। (লক্ষ্যণীয় যে, স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, বেলজিয়ামসহ বিভিন্ন দেশের পাসপোর্টধারী এমপি/মন্ত্রী, লুটপাটকারীরা বিভিন্ন উপায়ে দেশ ছেড়েছেন। জানা গেছে, এদের বেশিরভাগ ভারত হয়ে পালিয়ে এসেছেন।)
নির্বাচন কমিশন সংস্কারে হাত দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আমাদের পরামর্শ হচ্ছে, গোটা নির্বাচন কমিশনকে না পাল্টালে এর সুফল জাতি পাবে না। নির্বাচন কখনও গ্রহণযোগ্য হবে না। কোনো ঋণখেলাপী, অর্থ পাচারকারী, দন্ডিত অপরাধী এবং দ্বৈত নাগরিকরা অবৈধ উপায়ে যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে সে বিষয়ে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে। মিথ্যা তথ্যদাতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির নজির স্থাপন করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের অসাধু কর্মকর্তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
উল্লেখ করা প্রয়োজন, বাংলাদেশের সংবিধান দ্বৈত নাগরিকদের বিশেষ সুবিধা প্রদান করলেও অনেকে এর অপব্যবহার করছেন। জানা গেছে, দ্বৈত নাগরিকদের অনেকে অর্থ পাচারের সাথে জড়িত। এদের অনেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে সেকেন্ড হোমে নিরাপদে বসবাস করছেন। রাজনীতির পালা বদলে কেউ দেশে ফিরে যান, আবার কেউ পালিয়ে ফেরত আসেন। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের একটি বিশেষ চুক্তির মাধ্যমে পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে নেয়া এবং চিহ্নিত অপরাধীদের গ্রেফতার ও শাস্তির আওতায় আনার জোর দাবী জানাচ্ছি।