১২১ বিদ্যালয় বন্ধ রেখে শিক্ষকদের বনভোজন, শিক্ষা অফিসারকে শোকজ
চুয়াডাঙ্গা, ১১ ফেব্রুয়ারি – চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সবগুলো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রেখে মিলনমেলা ও বনভোজন করেন শিক্ষকরা। এতে অংশ নেন বিদ্যালয়ের সব শিক্ষকসহ কিছু স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ। স্কুল বন্ধ রেখে এই আয়োজন চলাকালীন বিষয়টি নিয়ে অভিভাবক মহলে শুরু হয় তীব্র সমালোচনা। এক পর্যায়ে তাৎক্ষণিকভাবে ছুটি বাতিল করে বিদ্যালয় খোলার নির্দেশ দেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার। তারপরও শিক্ষকদের ছুটি মঞ্জুর করার কারণে সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) শোকজ করা হয়েছে। একদিনের মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে তাকে।
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) ‘বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা শাখা’র ব্যানারে আক্কাছ লেক ভিউ পার্ক অ্যান্ড রিসোর্টে এই আয়োজন করা হয়।
অভিভাবকরা বলছেন, চলতি বছর প্রায় শিক্ষার্থীরা এখনো বই পায়নি। শুক্রবার ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি ছিল। তারপরও সোমবার বিদ্যালয় বন্ধ করে বনভোজন করা হয়। এমনিতেই শিক্ষার্থীরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তারওপর এভাবে ছুটি দিয়ে বনভোজন করা ঠিক হয়নি। অনুষ্ঠানটি যেকোনো ছুটির দিনে করা উচিত ছিল।
আর শিক্ষক সমিতির নেতারা বলছেন, সংরক্ষিত ছুটি নিয়েই তারা আয়োজন করেছেন। পরে ছুটি বাতিল করা হলে সবাই ক্লাসে ফিরে গেছেন।
এদিকে কীভাবে ও কেন ছুটি দিয়েছে তা জানতে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার লাইলা তাসলিমা নাসরিনের কাছে ব্যাখ্যা তলব করেছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। মঙ্গলবারের মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতারা এ মিলনমেলায় অংশ নেন। স্কুল বন্ধ রেখে এই আয়োজন করায় আলোচনার জন্ম হলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, উপজেলা শিক্ষা অফিসার, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারসহ প্রায় সব কর্মকর্তা কর্মচারী দাওয়াত পেলেও শেষ পর্যন্ত বেশ কয়েকজন যোগ দেননি। তবে পিকনিকের চাঁদা দিলেও অনেকের ভাগ্যে জোটেনি পিকনিকের রান্না করা বাহারী খাবার।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে সংরক্ষিত ছুটির আবেদন করা হয়। সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আমাদের ছুটি মঞ্জুর করেন। এরপরই আমরা মিলনমেলা ও বনভোজনের আয়োজন করি। আয়োজন চলাকালীন হঠাৎ আমাদের জানানো হয়, ছুটি বাতিল করা হয়েছে। এখনই স্কুল খোলার নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার। এরপরই দুপুর ২টার মধ্যে আমরা গুছিয়ে বের হই।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষকরা বছরে তিনটি সংরক্ষিত ছুটি পেয়ে থাকেন। সেই ধারাবাহিকতায় আমরা ছুটি পাস করিয়ে আয়োজন করেছিলাম। তবে কয়েকটা বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অংশগ্রহণ না করায় তাদের বিদ্যালয় খোলা ছিল। তবে এ বিষয়টি এখন কেন প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে তা আমার জানা নেই৷
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন শিক্ষক বলেন, ৮ ফেব্রুয়ারি সদর উপজেলার সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকদের নিয়ে প্রস্তুতি সভা করা হয়। সেখানে বনভোজন ও মিলনমেলার জন্য শিক্ষকদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৫০০ টাকা চাঁদা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
সদর উপজেলার আলুকদিয়া ইউনিয়নের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক শিক্ষিকা বলেন, সমিতির নেতারা বনভোজনের জন্য ৫০০ টাকা টাকা চাঁদা তুলেছেন। কিন্তু বনভোজনে শিক্ষকদের যাওয়ার জন্য কোনো যানবাহনের ব্যবস্থা রাখেনি। ১৫ কিলোমিটার পথ নিজ ব্যবস্থায় যেতে হবে। তাই আমার মতো অনেকেই চাঁদা দিয়েও বনভোজনে অংশ নেয়নি।
বনভোজনে অংশ নেওয়া নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষক জানান, আগে কখনোই বিদ্যালয় বন্ধ রেখে এভাবে প্রাথমিক শিক্ষকদের বনভোজন আয়োজন হয়নি। বনভোজনের জন্য প্রত্যেক শিক্ষকের কাছ থেকে বাধ্যতামূলক ৫০০ টাকা করে চাঁদা নেওয়া হয়। কিন্ত আয়োজনে ত্রুটি থাকায় শেষ পর্যন্ত অনেক শিক্ষক খাবার পায়নি বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার লাইলা তাসলিমা নাসরিন বলেন, শিক্ষা অফিসারের অনুমতিক্রমে প্রধান শিক্ষকরা বছরে তিনদিন সংরক্ষিত ছুটি নিতে পারেন৷ আমরা শিক্ষকরা বিশেষ করে শিক্ষক সমিতির যারা আছেন তারা চাচ্ছিলেন তাদের আয়োজনে পিকনিক করবেন। তাই সব শিক্ষকরা সংরক্ষিত ছুটির জন্য আবেদন করেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আমি ছুটি দিই।
শিক্ষা অফিসার লাইলা তাসলিমা নাসরিন বলেন, এর আগে কখনো এমন হয়নি। শিক্ষকরা সংরক্ষিত ছুটি নিয়ে থাকেন। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে শিক্ষকদের মধ্যে দুটি গ্রুপিংয়ের কারণে রিপোর্ট হয়েছে৷ আয়োজন চলাকালীন ছুটি বাতিল করা হলে সব শিক্ষকরা তাদের বিদ্যালয়ে যান এবং ক্লাস শুরু করেন। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার। আমি ব্যাখ্যা দেবো।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার অহীন্দ্র কুমার মন্ডল বলেন, বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ছুটি ক্যানসিল করে বিদ্যালয় খোলা হয়েছে। সারাদিন ক্লাসও হয়েছে৷ ছুটি কীভাবে দিয়েছিলেন, কেন দিয়েছেন তা জানতে সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। মঙ্গলবারের মধ্যেই ব্যাখ্যা জানাতে বলা হয়েছে।
সূত্র: জাগো নিউজ
এনএন/ ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫