ওয়াকফ প্রতিবাদে উত্তপ্ত মুর্শিদাবাদে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ হাইকোর্টের
কলকাতা, ১২ এপ্রিল – ওয়াকফ প্রতিবাদে এই মুহূর্তে উত্তপ্ত মুর্শিদাবাদে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার নির্দেশ দিল উচ্চ আদালত। শনিবার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দায়ের করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ বেঞ্চ জরুরি ভিত্তিতে সওয়াল-জবাবের পর জানায়, মুর্শিদাবাদে এখনই মোতায়েন করতে হবে কেন্দ্রীয় বাহিনী। বিচারপতি সৌমেন সেন ও বিচারপতি রাজা বসু চৌধুরীর বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, আগামী ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত পুলিশের সঙ্গে হাত হাত মিলিয়ে কাজ করবে বাহিনী। সুতি, সামশেরগঞ্জ, ধুলিয়ানে ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় বাহিনী রয়েছে। গোটা জেলায় থাকবে জওয়ানরা।
এদিনের শুনানিতে শুভেন্দু অধিকারীর আইনজীবী সওয়াল করেন, রাজ্যের গ্রন্থাগার মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী বলছেন যে অশান্তি ছড়িয়ে দেওয়া হবে। মুর্শিদাবাদের অশান্তির পরিপ্রেক্ষিতে বিএসএফ ডাকা হয়েছিল, কিন্তু জেলাশাসক তাদের কাজ করতে দিচ্ছেন না। বিশেষ সশস্ত্র সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হোক, রাস্তায় প্রতিবাদ বন্ধ হোক বলে সওয়াল করেন তিনি। এ প্রসঙ্গে বিরোধী দলনেতার আইনজীবী আরও সওয়াল, আমতলা থানা শুক্রবার কয়েকজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তারপর তাদের ছড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অশান্তি শুরু হয়। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন জরুরি বলে সওয়াল করেন শুভেন্দুর আইনজীবী।
এসব শুনে বিচারপতি সৌমেন সেন প্রশ্ন তোলেন, ”এখন আপনারা কী চান? কোন কোন জেলা স্পর্শকাতর?” শুভেন্দুর আইনজীবীর জবাব, ”সাধারণভাবে সেটা আমরা জানি এবং পুলিশও জানে।” রাজ্যের তরফে আইনজীবী পালটা সওয়াল করেন, ”১৩৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, ADG পদমর্যাদার আধিকারিক আছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। আমাদের আধিকারিকরা অদক্ষ নন। তারা দক্ষ হাতে সামলাচ্ছেন।”
বিচারপতি সৌমেন সেন মন্তব্য করেন, ”নির্দিষ্ট কাউকে রক্ষা করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। আমরা সামগ্রিকভাবে সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা দিতে চাই। আগে ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস-সহ একাধিক ক্ষেত্রে এই আদালত কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার নির্দেশ দিয়েছিল। নির্দিষ্ট সময়ের জন্য এই নির্দেশ দিলে রাজ্যের সুবিধা হবে।” এরপর রাজ্যকে নিজেদের বক্তব্য পেশ করার জন্য ৩০ মিনিট সময় দেয় উচ্চ আদালত। এই সময় রাজ্যের তরফে আইনজীবী তথা তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ভিডিও কলে যোগ দেন। তাঁর সওয়াল, ”৬ কোম্পানি বিএসএফ এবং ১ হাজার পুলিশ মোতায়েন আছে। আইজি, ডিআইজি পদমর্যাদার আধিকারিকরা এলাকায় আছেন। ডিজিপি রাজীব কুমার যাচ্ছেন ঘটনাস্থলে শুভেন্দু অধিকারী-সহ বিজেপি নেতারা অস্পষ্ট অভিযোগ করছেন, এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত মামলা।তবে আদালত কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিলে আমাদের আপত্তি নেই।”
এরপর বিচারপতি সৌমেন সেন মুর্শিদাবাদ জেলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়ে বলেন, ”এই ধরনের অভিযোগ যখন আসে তখন আদালত চোখ বন্ধ করে থাকতে পারে না।প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত করে কড়া পদক্ষেপ করতে হবে। শান্তি এবং সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনাই এখন আদালতের মূল লক্ষ্য।
অন্যত্র একই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হলে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সাহায্য চাইতে পারবে রাজ্য।”
সূত্র: সংবাদ প্রতিদিন পত্রিকা
এনএন/ ১২ এপ্রিল ২০২৫