পহেলা বৈশাখে রাজধানীতে দিনভর যত আয়োজন
ঢাকা, ১৪ এপিল – আজ পহেলা বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দের শুভ সূচনা। বাংলা নববর্ষের আগমন মানেই বাঙালির ঘরে ঘরে উৎসবের আমেজ। এই দিনটি আনন্দ, সম্প্রীতি আর ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার দিন। বাংলা সনকে বরণ করে নিতে মুখরিত রাজধানী ঢাকা, যেখানে নানা বর্ণাঢ্য আয়োজন করা হয়েছে।
নতুন বছরকে বরণ করে নিতে বরাবরের মতো এবারও প্রস্তুত বাংলাদেশ। বর্ষবরণ উপলক্ষে বাঙালি ছাড়াও বিভিন্ন জাতিসত্তা মাতে তাদের নিজেদের উৎসবে। এবার তাই সরকারিভাবেই বর্ষবরণের আয়োজনে যুক্ত হয়েছে অন্য জাতিসত্তাগুলোও।
সোমবার ভোরের আলোর সাথে সাথে শুরু হয় ছায়ানটের এবার অনুষ্ঠান। এবারের অনুষ্ঠান সাজানো হয়েছে নতুন আলো, প্রকৃতি ও মানুষকে ভালোবাসার গান ও আত্মবোধনের জাগরণের সুরবাণী দিয়ে। প্রায় দুই ঘণ্টার এ আয়োজন ছায়ানটের ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজসহ বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে।
এছাড়া, সকাল ৬টায় ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে শুরু হয়েছে সুরের ধারার আয়োজনে পাহাড় ও সমতলের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। মুক্তমঞ্চে হবে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আশপাশে রয়েছে বাহারি বাঙালি খাবার।
‘নববর্ষে ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’—এই প্রতিপাদ্যে চব্বিশের চেতনা ধারণ করে সমকাল, ইতিহাস, ঐতিহ্যকে ধারণ করে এবারের নববর্ষের আয়োজন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ। সকাল ৯টায় চারুকলা অনুষদ থেকে বের হবে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’। এই আয়োজনে বাঙালিসহ পাহাড় ও সমতলের ২৮টি জাতিগোষ্ঠীর ৪৯৪ জন শিল্পী বর্ণিল সাজে সজ্জিত হয়ে অংশগ্রহণ করবে।
এবারের শোভাযাত্রা ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি, কাঠের বাঘ, ইলিশ মাছ, ইসরায়েলের বর্বরতার বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে তরমুজের ফালি, শান্তির পায়রা, পালকি, মীর মুগ্ধের স্মৃতিবাহী পানির বোতল—শোভাযাত্রায় থাকবে এই সাতটি বড় মোটিফ বা শিল্প-অবকাঠামো। এর বাইরে থাকবে মাঝারি আকৃতির ১০টি সুলতানি আমলের মুখোশ, ২০টি রঙিন চরকি, আটটি তালপাতার সেপাই, পাঁচটি তুহিন পাখি, চারটি পাখা, ২০টি ঘোড়া ও ১০০ ফুট লোকজ চিত্রাবলির ক্যানভাস। ছোট মোটিফের মধ্যে থাকবে ৮০টি ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি, ২০০টি বাঘের মাথা, ১০টি পলো, ছয়টি মাছ ধরার চাঁই, ২০টি মাথাল, পাঁচটি লাঙল, পাঁচটি মাছের ডোলা। চারুকলা অনুষদের সম্মুখভাগের সীমানা প্রাচীর ইতোমধ্যে হলুদ রঙের ওপর রাজশাহী অঞ্চলের শখের হাঁড়ির মোটিফে আঁকা হয়েছে ফুল-পাখি, লতা-পাতার দৃশ্য।
শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় ঢাকার চীনা দূতাবাসের কারিগরি সহায়তায় এবং বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সহযোগিতায় রাজধানীতে হবে ‘ড্রোন–শো’ ও ‘ব্যান্ড-শো’। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে এই অনুষ্ঠান হবে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে।
গুলশান-২-এর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ স্মৃতি পার্কে চলছে তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা ও নগর উৎসব। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে হচ্ছে এই আয়োজন। মেলা চলবে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত।
‘ঐ নতুনের কেতন ওড়ে’—শিরোনামে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে সকাল ১০টা থেকে দিনব্যাপী বাংলা বর্ষবরণ উৎসব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে সাংস্কৃতিক ঐক্যফ্রন্ট। এই আয়োজনে চিরায়ত বাংলা গান, দেশাত্মবোধক গান, জারিসারি, পুঁথিপাঠ, গম্ভীরা ও নাটিকা পরিবেশিত হবে। অনুষ্ঠানে ১৪টি শিল্পীগোষ্ঠী অংশগ্রহণ করবে।
এছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বৈশাখী মেলা ও উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্যে উত্তরার দিয়াবাড়ি, সুত্রাপুরের ধূপখোলা মাঠ, ওয়ারীর টিপু সুলতান রোড এবং পূর্বাচলের তিন শ ফুট উল্লেখযোগ্য।
সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল
আইএ/ ১৪ এপিল ২০২৫