জাতীয়

যেভাবে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন পাপুল

ঢাকা, ৩০ জানুয়ারি – লক্ষ্মীপুর সদরের আংশিক ও রায়পুর উপজেলা নিয়ে গঠিত লক্ষ্মীপুর-২ আসন থেকে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া পাপুল ঢাকা ও চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠেন। তিনি ১৯৯২ সালে তাঁর ভাই বিএনপি নেতা কাজী মঞ্জুরুল আলমের হাত ধরে কুয়েত যান। তাঁর বিরুদ্ধে কুয়েতে প্রতারণার মাধ্যমে ২০ হাজারেরও বেশি শ্রমিকের কাছ থেকে প্রায় এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। গত বছরের শুরুতে পাপুলের দুর্নীতির নিয়ে কয়েকটি গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়।

পাপুলের ঘনিষ্ঠরা জানান, ২০১৬ সালে লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে আসেন পাপুল।

সেখানে স্থানীয় একটি রেস্টুরেন্টে সংবাদকর্মীদের নিয়ে মতবিনিময় করেন। রায়পুরকে জেলায় রূপান্তরের উদ্যোগ নেওয়াসহ নানা প্রতিশ্রুতির কথা জানান তখন। এরপর রায়পুর পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক জামশেদ কবির বাক্কি বিল্লাহর হাত ধরে তিনি কিছু দান-খয়রাত করেন। তখন থেকে পাপুল নিজেকে ‘দানবীর’ ও ‘মানবতার সেবক’ হিসেবে প্রচার শুরু করেন। সঙ্গে জুটে যায় একদল অনুসারী। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জোটগত কারণে জাতীয় পার্টির জেলা সভাপতি মোহাম্মদ নোমানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। তখন শহিদ ইসলাম পাপুল স্বতন্ত্র (আপেল) প্রার্থী হন।

আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের জন্য উপহার পাঠিয়েছে সিঙ্গাপুর : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

নির্বাচনের এক সপ্তাহে আগে মোহাম্মদ নোমান নাটকীয়ভাবে গাঢাকা দেন। তখন অভিযোগ ছিল, পাঁচ কোটি টাকার বিনিময়ে নোমানকে নির্বাচন থেকে পাপুল সরিয়ে দিয়েছেন। নির্বাচনের কয়েক দিন আগে রায়পুর তাজমহল সিনেমা হলের সামনে দলের জরুরি সভায় আওয়ামী লীগের জেলা সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু প্রকাশ্যে বলেছিলেন, ‘বিপুল অঙ্কের টাকার বিনিময়ে নোমান নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।…অনেক টাকা, অনেক টাকা।’ তাঁর এই বক্তব্য নিয়ে তাত্ক্ষণিকভাবে সভায় নেতাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতিও হয়েছিল।

নির্বাচনের আগে পাপুল স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা আরো জোরদার করেন। দলটির স্থানীয় কয়েকজন নেতা বলেছেন, পাপুল টাকার বিনিময়ে সংসদ সদস্য পদ বাগিয়ে নিয়েছেন। স্ত্রীকেও সংসদ সদস্য করেছেন। রায়পুরে আওয়ামী লীগের একাধিক সভায় তাঁকে প্রধান অতিথিও করা হয়। ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা। গত বছর জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় পাপুলকে নব্য হাইব্রিড আখ্যা দিয়ে একাধিক নেতা বক্তব্য দিয়েছিলেন।

রায়পুর উপজেলার আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠনের শতাধিক নেতাকর্মীকে পাপুল নির্বাচনের আগে-পরে মোটরসাইকেল দিয়েছেন বলেও জানা যায়।

লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এম আলাউদ্দিন কালের, ‘অবৈধ টাকার বিনিময়ে আমাদের কিছু সুবিধাবাদী নেতা পাপুলকে এমপি বানিয়েছেন। যাঁরা তাঁকে সহযোগিতা করেছিলেন, জনসমক্ষে তাঁদের মুখোশ উন্মোচন হওয়া উচিত।’

দলের জেলা কমিটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক রাসেল মাহমুদ ভূঁইয়া মান্না বলেন, ‘পাপুল আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যও নন। যাঁরা পাপুলদের অপকর্মে সহযোগিতা করেছেন, তাঁদেরও বিচার হওয়া প্রয়োজন।’

কেন্দ্রীয় যুবলীগের উপপরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শামছুল ইসলাম পাটওয়ারী বলেন, ‘টাকার বিনিময়ে শীর্ষস্থানীয় আওয়ামী লীগের কিছু নেতার ওপর ভর করেছিল সে। পরে নাটকীয়ভাবে স্বামী-স্ত্রী এমপি হয়েছে।’

জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ও জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ফরিদা ইয়াসমিন লিকা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের বিতর্কিত নেতারা এই পাপুলদের আবিষ্কার করেছে।’

সূত্র : কালের কন্ঠ
এন এইচ, ৩০ জানুয়ারি

Back to top button