মানুষ মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার এখনো তাদের জন্য কার্যকর সমাধান
ঢাকা, ২৮ এপ্রিল – বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, দেশের মানুষ এখনো অন্তর্বর্তী সরকারের ওপরই আস্থা রাখছে এবং এটিকেই সবচেয়ে কার্যকর সমাধান হিসেবে দেখছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। সাক্ষাৎকারটি সম্প্রচার হয় গত রোববার রাতে।
দোহায় অনুষ্ঠিত আর্থনা সামিটে অংশ নিতে গিয়ে দেওয়া এই সাক্ষাৎকারে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “মানুষ এখনো ধৈর্য ধরে আছে, তারা মনে করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই সেরা বিকল্প। এখন পর্যন্ত এমন কোনো সংকট দেখা দেয়নি, যেখানে জনগণ নির্বাচন চেয়ে আমাদের সরিয়ে দিতে বলেছে।”
আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সরকার অর্থবহ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সংস্কারের পরিমাণ ও গভীরতার ওপর নির্ভর করে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, সংস্কার প্রক্রিয়া সংক্ষিপ্ত হলে ডিসেম্বরেই নির্বাচন সম্ভব, আর প্রক্রিয়া দীর্ঘ হলে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। তবে “জুনের পরে নয়,” বলেও তিনি স্পষ্ট করেন।
তার ভাষায়, “এই নির্বাচন হবে বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা নির্বাচন।”
আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না, এই বিষয়ে প্রশ্নে ইউনূস বলেন, এটি রাজনৈতিক ও আইনি বিষয়। দলটি এখনো আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত জানায়নি। আবার অন্য রাজনৈতিক দলগুলো দাবি করতে পারে, আইন অনুযায়ী আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের সুযোগ নেই। নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ হবে।
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত অবস্থান এবং রাজনৈতিক বক্তব্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “যদি ভারত শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিতে চায়, তবে আমরা সেটা প্রতিরোধ করতে পারব না। তবে ভারত থেকে তার বক্তব্য আমাদের জন্য জটিলতা সৃষ্টি করছে।”
তিনি জানান, শেখ হাসিনার প্রত্যাবাসনের বিষয়ে ভারত সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শুরু হলে আদালতের মাধ্যমে নোটিশ পাঠানো হবে বলেও উল্লেখ করেন।
ভারত সফরের আগ্রহ থাকলেও সাড়া না পাওয়ায় তিনি চীন সফরে যান বলে জানান ইউনূস। এরপর মালয়েশিয়ায় যাওয়ার পরিকল্পনার কথাও জানান। “আমি সেখানেই যাচ্ছি, যেখানে যেতে চাই,” বলেই তিনি আঞ্চলিক সম্পর্ক জোরদারে বিমসটেক এবং সার্ক পুনরুজ্জীবনের উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন।
ভারত এড়িয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করছেন কি না—প্রশ্নে তিনি বলেন, “এটা হয়তো সাময়িক। আমরা একসঙ্গে সমাধানের পথ খুঁজছি, এটাকে আমি চূড়ান্ত কিছু ভাবছি না।”
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গেও বাংলাদেশের ভালো ও উষ্ণ সম্পর্ক রয়েছে বলে উল্লেখ করেন ইউনূস। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কোনো একটিকে বেছে নেওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এটা বেছে নেওয়ার বিষয় নয়, সবাই আমাদের বন্ধু: যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত তিনজনই আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী।”
পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে বিদেশি সরকারগুলোর সহায়তা পাওয়ার কথাও জানান তিনি।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরকার জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছে বলে জানান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “আমরা চাই রোহিঙ্গারা নিরাপদে তাদের দেশে ফিরুক। মিয়ানমারের সঙ্গে কূটনৈতিক বোঝাপড়ার পথ খুঁজছি।”
সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল
এনএন/ ২৮ এপ্রিল ২০২৫