গাইবান্ধা

শেখ হাসিনার বদান্যতায় বস্তি এখন নান্দনিক গ্রাম

সালাহ উদ্দিন জসিম

চাঙ্গুরা। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তবর্তী একটি গ্রাম। একটু পশ্চিমে এগুলেই দেখা মেলে প্রতিবেশী জেলা জয়পুরহাট ও অন্যদিকে দিনাজপুর। তবে নিজ জেলা সদর গাইবান্ধা বহুদূর। গ্রামীণ জনপদের চিরচেনা আঁকাবাঁকা সরুপথ গিয়ে মিশেছে এক পুকুরপাড়ে। নাম বোস্তা পুকুরপাড়। এই পুকুরকে ঘিরে গড়ে উঠছে নান্দনিক গ্রাম। চারপাশে বর্নিল পাকা ঘর, মাঝখানে পুকুর। আলো জ্বলজ্বল করে। অথচ এখানে আগেই ছিল ছোট ছোট মাটি ও খড়ের ঘর। বিদ্যুতের আলোহীন ঘুটঘুটে অন্ধকার বসতি (বস্তি)। এখানে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাঁওতালদের বাস।

এই সাঁওতাল পল্লীর শীর্ণকায় মানুষের জীবনাযাত্রা ও তাদের নানান গল্প সরেজমিনে শুনেছেন প্রতিবেদক। তারা জানিয়েছেন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ৫০টি পরিবারের বাস এখানে। সরকারি জায়গায় থেকে ও পরের জমিতে কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।

‘খাবার জোগাতেই হিমশিম, ঘর বা বাড়ির চিন্তা তো মাথায়ই আসে না। প্রায় ৪০ থেকে ৫০ বছর ধরে কাঁদামাটি আর খড়কুটোর ঘর করে জীবন কাটাই।’ বলেন গ্যাব্রিয়েল হেমব্রোম (৬৫)।

আরও পড়ুন : একযোগে টিকা নেবেন মন্ত্রী-এমপিরা

গ্যাব্রিয়েল হেমব্রোম ছাড়াও উইলিয়াম হেমব্রোম, রবেট (৪০), বুনিতা সরেন (৩০), মনি মাড্ডি (৩৫) ও সাকিলা কিসলুদের (৩০) সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একরকম জীবনযুদ্ধ তাদের। মাটি ও খড়কুটোর বাসা বেঁধে পাখির মতো অস্থায়ী জীবনযাপন। প্রভাবশালীরা চাইলেই তুলে দিতে পারেন। যেকোনো সময় কেটে নিয়ে যান গাছ ও ভিটের মাটি। বাধা দেয়ার জো নেই, কারণ তারাই তো থাকেন পরের জায়গায়। স্ত্রী, পরিবার-পরিজনের খাবার জোটে না। এই অন্ন জোগাড়ের সংগ্রামেই পার হয়ে যায় সময়। ঘরবাড়ি নিয়ে চিন্তা মাথায়ও আসে না।

তবে তাদের জীবনে দেবদূত হয়ে আবির্ভাব হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি তাদের জমির মালিকানাসহ বাড়ি করে দিচ্ছেন। দিয়েছেন বিদ্যুৎ। দীর্ঘ জীবন সংগ্রামের পর তাদের ঘরে আলো জ্বলছে। তাদের কাদামাটি আর খড়কুটোর বস্তি হচ্ছে নান্দনিক গ্রাম, যেখানে থাকছে শহরের সুবিধা। থাকছে স্বাবলম্বী হওয়ার নানা উপায়-উপকরণ।

গ্যাব্রিয়েল হেমব্রোম (৬৫) বলেন, ‘গত ৪০ বছর ধরে কাদামাটির ঘরে থাকি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাকা ঘর করে দিয়েছেন। ভালোই হলো। শেষ জীবনে অন্তত ভালো থাকব।’

মনি মাড্ডি বলেন, ‘স্বামী ও ছেলে-মেয়ে নিয়ে মাটির এক ঘরে আমার সংসার। কৃষিকাজ করে কোনো রকমে চলতাম। কখনই আমরা জমি কিনতে পারতাম না, আর এমন পাকা ঘরও করতে পারতাম না। প্রধানমন্ত্রী জমি ও পাকা ঘর করে দিয়েছেন। আরও অনেক সাহায্য করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর কারণে আমরা ভালো আছি। এ জন্য তাকে ধন্যবাদ।’

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রামকৃষ্ণ বর্মন বলেন, ‘এখানে ৫০টি সাঁওতাল পরিবার মাটি ও খড়ের ঘরে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করতো। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্বাহী সেলের তত্ত্বাবধানে ‘সমতলে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন’ কার্যক্রমের আওতায় আমরা এই ৫০টি পরিবারকে জমির মালিকানাসহ পাকা বাড়ি করে দিয়েছি। পাশাপাশি তাদের স্বাবলম্বী করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছি। তাদের একটি সমবায় সমিতি করে দিব। সামনের এই পুকুর ওই সমিতিকে আমরা দিয়ে দেব। এটি চাষাবাদ করে যা আয় হবে সবাই সমভাবে পাবে।’
তিনি বলেন, ‘দরিদ্রদের জীবনমান উন্নত করতে গবাদিপশু, সেলাই মেশিন ও সাইকেলসহ নানা উপকরণ ও প্রশিক্ষণ আমরা দিয়ে থাকি, যাতে করে তাদের কর্মসংস্থান হয়, দরিদ্র্যতা ঘোচে, স্বাবলম্বী হন তারা। এখানকার বাসিন্দাদের জন্যও এমন ব্যবস্থা থাকবে।’

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্বাহী সেলের মহাপরিচালক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান বলেন, ‘মুজিববর্ষে একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না’- প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণার আলোকে গৃহহীনদের মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে ঘর দেয়া হচ্ছে। আমরা আমাদের সেল থেকে সমতলে বসবাসরত সাড়ে তিন হাজার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর উপহার ঘর করে দিয়েছি। পর্যায়ক্রমে সবাইকে দেয়া হবে। কেউ গৃহহীন থাকবে না।’

এদিকে মুজিববর্ষে ইতোমধ্যে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ৭০ হাজার পরিবারকে জমিসহ পাকা বাড়ি করে দেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ৯ লাখ মানুষ এ সুবিধা পাবে।

সূত্র : জাগো নিউজ
এন এ/ ০৫ ফেব্রুয়ারি

Back to top button