পঞ্চগড়

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো দেখা মিলল যে সাপের

পঞ্চগড়, ১১ ফেব্রুয়ারি – পঞ্চগড়ে বোদায় বিরল প্রজাতির সাপ উদ্ধার করা হয়েছে। জেলার বোদা উপজেলার ঝলইশালশিরী ইউনিয়নের কালিয়াগঞ্জ বাজার এলাকা থেকে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো দেখা বিরল প্রজাতির এই সাপটির নাম রেড কোরাল কুকরি স্নেক (Red Coral Kukri/Aligodon Kheriensis Snake)।

পঞ্চগড়ের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও উদ্ধারকারী মো. সহিদুল ইসলাম এই সাপটি উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হস্তান্তর করেছেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভিআরসি’র প্রশিক্ষক বোরহান বিশ্বাস রোমন এই সাপটি চট্টগ্রাম নিয়ে যান।

পঞ্চগড়ের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও উদ্ধারকারী মো. সহিদুল ইসলামের বাড়ি পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার ঝলইশালশিরী ইউনিয়নের ডাবরভাংগা নতুনহাট এলাকায়। সে ওই এলাকার মো. হায়দার আলী ছেলে।

সহিদুল ইসলাম বলেন, ‘গত রোববার বোদা উপজেলার ঝলইশালশিরী ইউনিয়নের কালিয়াগঞ্জ বাজারের পাশের একটি উঁচু জায়গা এক্সেভেটর মেশিন দিয়ে মাটি কাটার সময় একটি সাপ বেরিয়ে আসে। তখন এলাকাবাসী আমাকে খবর দেয়। খবর পেয়ে আমি সেখানে গিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির ৮টির সাপ উদ্ধার করি।’

আরও পড়ুন : পঞ্চম দিনে টিকা নিলেন দুই লাখেরও বেশি মানুষ, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ৮৬ জনের

তিনি বলেন, ‘সাপগুলো হচ্ছে-একটি রেড কোরাল কুকরি, দুইটি দাঁড়াশ সাপ, একটি গুঁইসাপ,দুইটি হেলে ও একটি কৃষ্ণ কালাচ। উদ্ধারকৃত সাপগুলোর মধ্যে রেড কোরাল কুকরি সাপটি এস্কেভেটরের আঘাত পেয়েছে। আমি প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছি। পরে ভেনম রিসার্চ সেন্টারের প্রশিক্ষক বোরহান বিশ্বাস রোমনের কাছে রেড কোরাল কুকরি সাপটি হস্তান্তর করি। অন্য সাপগুলো বন বিভাগের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে অবমুক্ত করা হয়।’

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভেনম রিসার্চ সেন্টারের প্রশিক্ষক ও সাপ গবেষক বোরহান বিশ্বাস রোমন জানান, ‘সাপটি মারাত্মকভাবে জখম হয়েছে। সাপটি বর্তমানে রাজশাহীতে সাপ উদ্ধার ও সংরক্ষণ কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন রয়েছে।’

তিনি জানান, উজ্জল কমলা ও লাল প্রবাল রঙ এই সাপটি অত্যন্ত মোহনীয়। লাল প্রবাল সাপটি মৃদু বিষধারী ও অত্যন্ত নিরীহ। এই সাপটি পৃথিবীর দুর্লভ সাপদের একটি। পৃথিবীতে হিমালয়ের পাদদেশ দক্ষিণে ৫৫ আর পূর্ব-পশ্চিমে ৭০ কিলোমিটার এলাকায় দেখা যায়। পৃথিবীর ২১তম সাপটি মৃত অবস্থায় ও ২২তম সাপটি মারাত্মকভাবে আহতাবস্থায় পাওয়া গেছে।

তিনি জানান, সর্বপ্রথম এই সাপের দেখা মেলে ১৯৩৬ সালে ভারতের উত্তরপ্রদেশের খেরি জেলায়। সেই নামানুসারেই জুওলোজিক্যাল নামকরন করা হয়েছে oligodon kheriensis। দীর্ঘ ৮২ বছর পর ২০১৯ সালে আবার ঊত্তরপ্রদেশের খেরি জেলায় দেখা গিয়েছিল লাল প্রবাল সাপটি। এ ছাড়া নেপালের মহেন্দ্রনগর, চিতোয়ান ন্যাশনাল পার্ক, ভারতের নৈনিতাল, জলপাইগুড়ির বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন সময়ে দেখা যায়।

রোমন জানান, সাপটি নিশাচর এবং বেশির ভাগ সময় মাটির নিচেই থাকে। সম্ভবত মাটির নিচে কেঁচো ও পিপড়ার ডিম ও উইপোকার ডিম খেয়ে জীবনধারণ করে। নরম মাটি পেলে মাটি খুঁড়ে ভেতরে চলে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে।

তিনি জানান, মাটির ভেতরে থাকার জন্য রোসট্রাল স্কেল ব্যবহার করে সাপটি। রোসট্রাল স্কেল হলো সাপের মুখের সম্মুখ ভাগে অবস্থিত অঙ্গবিশেষ যার সাহায্যে মাটি খনন করে। এ সাপটি পূর্ণ বিষধর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।এ বিষয়ে গবেষণা চলছে।

সূত্র : আমাদের সময়
এন এ/ ১১ ফেব্রুয়ারি

Back to top button