কানাডার বাঙালি সমাজে আজকাল অনুষ্ঠান আর অনুষ্ঠান। প্রতিটি উইকএন্ডে কিছু না কিছু লেগে আছে। গানের অনুষ্ঠান, নাচের অনুষ্ঠান, আবৃত্তির অনুষ্ঠান, নাটক, স্মরণসভা, প্রতিবাদ সভা কত কি! এত্তসব অনুষ্ঠান সমূহের ভিড়ে গত রোববার একটি ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো নগরীর রয়েল কানাডিয়ান লিজিওন হলে। টরন্টোর সর্বস্তরের নাগরিকদের দ্বারা সংবর্ধিত হলেন আমাদের সকলের প্রিয় কবি আসাদ চৌধুরি। শেখ সাদী বলেছিলেন যে সমাজ (জাতি) গুণী মানুষের কদর জানে না, সে সমাজে (দেশে) গুণী মানুষ জন্মায় না। আমি বলবো টরন্টোবাসী এ অভিশাপ থেকে মুক্ত। এর আগে প্রয়াত কবি শামসুর রাহমানের সংবর্ধনা হয়েছিল এ নগরীতে ১৯৮৯ সালে। আর এসব মহতী উদ্যোগগুলো সম্পন্ন হচ্ছে কিছু মহৎ ব্যক্তি এ নগরীতে বাস করেন বলেই। এদের মধ্যে কবি ইকবাল হাসানের নাম না নিলে নয়। দুটো সংবর্ধনা অনুষ্ঠানেরই উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি। এছাড়াও এ নগরীতে বাস করেন শিল্প-সংস্কৃতির সাথে জড়িত অনেক অনেক গুণী ব্যক্তিত্ব যাদের সম্মিলিত উদ্যোগে এ ধরনের উদ্যোগ সাফল্যমন্ডিত করা সম্ভব হয়।
এদিন নগরীতে বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠান ছিল। তারপরও এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। ছিল অন্য রকম একটা নিস্তবতা, অন্যরকম একটা শ্রদ্ধাবোধ, অন্যরকম একটা ভালবাসা। আয়োজকদের ধন্যবাদ জানাই এরকম একটি মানসম্পন্ন অনুষ্ঠান উপহার দেয়ার জন্য। দীর্ঘদিন পর মনভরে উপভোগ করলাম একটি অনুষ্ঠান।
শুরুটা ছিল খুবই সুন্দর। পূর্ব ঘোষিত সময় অনুযায়ী ঠিক বিকেল ৪টায় ফুলের পাঁপড়ি ছিটিয়ে কবিকে অভ্যর্থনা জানান আয়োজক এবং ভক্তবৃন্দ। তারপর কবিকে একটি স্থানে বসানো হয় যেখানে প্রিন্ট করা বুকমার্কে তিনি তার কবিতার কয়েকটি পংক্তিসহ ভক্তদের অটোগ্রাফ প্রদান করেন। এ সময় ভক্তবৃন্দের অনেকে তাঁকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। কেউ কেউ বিভিন্ন ধরনের উপহার সামগ্রী প্রদান করেন।
এরপর একে একে টরন্টো’র স্থানীয় শিল্পীরা কবিকে নিবেদন করে সংগীত পরিবেশন করেন। দর্শক-শ্রোতারা জনপ্রিয় এসব শিল্পীদের পরিবেশনা পিন পতন নীরবতার মধ্য দিয়ে উপভোগ করেন।
কবিকে সংবর্ধনা দেয়া হবে আর তাঁর সম্পর্কে কিছু বলা হবে না তা কি হয়? কবিকে চেনেন, জানেন এমন ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও শহরের গণ্যমাণ্য ব্যক্তিবর্গ কবির দীর্ঘায়ু কামনা করে একে একে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। বক্তৃতার ফাঁকে ফাঁকে ছিল আবৃত্তি। বিশেষ করে হিমাদ্রীর আবৃত্তি ছিল শিহরণ জাগানো একটি পরিবেশনা। বক্তৃতা ও কবিতা এ দুটোর এত সুন্দর সমন্বয় ছিল যে ৫টি ঘন্টা কিভাবে কেটে গেছে কেউ টেরই পাননি। দেখলাম, বক্তৃতাও মানুষ শোনেন। যেখানে অন্যান্য অনুষ্ঠানে বক্তৃতা শুনলে মানুষ ধৈর্যহারা হয়ে যান কিন্তু এখানে ছিল ব্যতিক্রম। দেখলাম প্রিয় একজন কবির জন্য বক্তৃতাও কিভাবে উপভোগ্য হয়ে ওঠে।অবশেষে মঞ্চে উপবিষ্ট কবি মাইক্রোফোনের সামনে এসে দাঁড়ালেন। বর্ণনা করতে থাকলেন তাঁর জীবনের বিভিন্ন মজাদার অভিজ্ঞতা। মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে হলভর্তি দর্শক উপভোগ করলেন তাঁর সেসব গল্প। মনে হচ্ছিলো বক্তৃতা নয়; ছন্দে ছন্দে কবিতা পড়ছেন তিনি।
পরিশেষে বলতে চাই, ভাল উদ্যোগের জন্য যেমন হলভর্তি দর্শক পাওয়া যায়; তেমন ভাল উদ্যোগের জন্য প্রশংসা করতেও কেউ কার্পণ্য করে না।