সকালে খালি পেটে ফল খেলে কী হয়?
খালি পেটে জল আর ভরা পেটে ফল – পুরোনো এ বাংলা প্রবাদটি আমরা অনেকেই শুনে এসেছি। খালিপেটে ফল না খাওয়ার জন্য গুরুজনের উপদেশও পেয়েছেন অনেকে। কিন্তু কেন খালিপেটে ফল খেতে মানা ভেবে দেখেছেন কি? কারণটি শুধুই অ্যাসিডিটি নয়।
ফলকে প্রায়শই স্বাস্থ্যকর খাদ্যতালিকায় খুব গুরুত্ব দেওয়া হয়, যা ভিটামিন, খনিজ ও আঁশে পরিপূর্ণ। কম ক্যালোরি ও উচ্চ পুষ্টিগুণের কারণে ওজন কমানোর ডায়েটেও ফল একটি প্রধান উপাদান।
সকালটা ঠিকভাবে শুরু করার ক্ষেত্রে অনেকেই ভাবেন, খালি পেটে ফল খাওয়া কি ঠিক? বিশেষজ্ঞদের মতে, ফল খাওয়ার অনেক উপকারিতা থাকলেও খালি পেটে ফল খাওয়া ততটা উপকারী হয়।
মুম্বাইয়ের কোকিলাবেন ধীরুভাই আম্বানি হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল ডায়েটিশিয়ান ফিওনা সামপাত সম্প্রতি এইচটি লাইফস্টাইলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ব্যাখ্যা করেছেন কেন সকালে খালি পেটে ফল খাওয়া সবসময় ভালো নয়। তিনি দিন শুরু করার কিছু স্বাস্থ্যকর বিকল্পও সুপারিশ করেছেন।
অনেকের ধারণা, খালি পেটে ফল খেলে এর স্বাস্থ্য উপকারিতা বেড়ে যায়। তবে ফিওনা সামপাতের মতে, এই দাবির সমর্থনে কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। বরং সকালে খালি পেটে ফল খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বেড়ে যেতে পারে।
সকালে খালি পেটে ফল খেলে কী হবে
খালি পেটে ফল খাওয়ার বিষয়ে ফিওনা সামপাত যা বলেছেন-
পেটে অন্য কোনো খাবার না থাকলে ফলের প্রাকৃতিক চিনি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা হঠাৎ করে বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ার পর আবার হঠাৎ করেই কমে যায়, যা ক্লান্তি, ক্ষুধা ও অনিয়ন্ত্রিত গ্লুকোজ মাত্রার কারণ হতে পারে।
ডায়াবেটিসের মতো বিশেষ স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য রক্তে গ্লুকোজের এই ওঠানামা বিশেষভাবে সমস্যাজনক হতে পারে। এছাড়া কমলা বা মোসাম্বির মতো সাইট্রাস ফল খালি পেটে খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে, কারণ এসব ফলে অ্যাসিডিটি থাকে যা পেটের আবরণকে জ্বালাতন করতে পারে।
তবে সকালের খাদ্যতালিকা থেকে ফল একেবারে বাদ দেওয়া উচিত নয়। বরং ফল খাওয়ার ধরনে পরিবর্তন আনা গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যকর চর্বি ও প্রোটিনের সঙ্গে ফল খেলে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং সকালজুড়ে স্থায়ী শক্তি পাওয়া যায়। যেমন- বাদাম, বীজ বা দই, ছানা, দুধ বা ডালের মতো প্রোটিন উৎসের সঙ্গে ফল খেলে রক্তে শর্করার ওঠানামা কম হয়। এই সংমিশ্রণ সামগ্রিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সহায়ক পুষ্টিও সরবরাহ করে।
গবেষণায় দেখা গেছে, সকালে প্রথমে না খেয়ে বরং দু’বেলার খাবারের মাঝে ফল খেলে সামগ্রিক শক্তি গ্রহণ কম হয় এবং পূর্ণতার অনুভূতি বাড়ে, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ফলের রসের বদলে আস্ত ফল খাওয়া। ফলের রসে আঁশ ও সূক্ষ্ম পুষ্টি উপাদানের অভাব থাকে, যা সম্পূর্ণ ফলে পাওয়া যায়।
দিন শুরু করার স্বাস্থ্যকর বিকল্প
১. বাদাম ও বীজ: কাঠবাদাম, আখরোট, লবণমুক্ত পেস্তা বাদাম, ফ্ল্যাক্সসিড ও কুমড়ার বীজ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে সমৃদ্ধ যা স্থায়ী শক্তি প্রদান করে।
২. গরম পানির মিশ্রণ: জিরা পানি, ধনিয়া বীজের পানি, মৌরি বীজের পানি ও হলুদ পানি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রদাহরোধী গুণে সমৃদ্ধ যা বিপাক ও হজমশক্তিকে সমর্থন করে।
৩. চিয়া সিড পানি: চিয়া বীজ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ও আঁশের চমৎকার উৎস যা হৃদস্বাস্থ্য উন্নত করে, রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে ও পূর্ণতার অনুভূতি দেয়।
৪. লেবু পানি: এটি সতেজতা ফিরিয়ে আনে, পানিশূন্যতা রোধ করে, হজমে সহায়তা করে ও ভিটামিন সি সরবরাহ করে।
৫. দুধ: একটি প্রোটিন সমৃদ্ধ পানীয় যা হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষা করে ও রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করে।
স্বাস্থ্যকর চর্বি বা প্রোটিনের সঙ্গে ফল খাওয়ার মতো কিছু ছোটখাটো পরিবর্তন করে আপনি রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি এড়াতে পারবেন এবং ফলের উপকারিতা উপভোগ করতে পারবেন। এছাড়া সকালে অন্যান্য পুষ্টিকর বিকল্প খুঁজে দেখলে দিনের শুরুটা স্বাস্থ্যকর ও শক্তিবর্ধক হতে পারে।
আইএ