নারী ও শিশুর নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ সংবেদনশীল হয়ে কাজ করবেন
ঢাকা, ২৯ এপ্রিল – নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে দেশের মানুষ পুলিশ বাহিনীকে খুবই শক্তিশালী ভূমিকায় দেখতে চায় বলে উল্লেখ করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় তিনি নারী-শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিতে সর্বোচ্চ সংবেদনশীল হয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালনে পুলিশ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) সকালে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার মাধ্যমে পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান।
এ সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী, আইজিপিসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে দেশের মানুষ পুলিশ বাহিনীকে খুব শক্তিশালী ভূমিকায় দেখতে চায়। আমি আপনাদের প্রতি আহ্বান জানাই নারী ও শিশুর নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ সংবেদনশীল হয়ে কাজ করবেন। সব শ্রেণি-পেশার নারীরা যেকোনো ধরনের ঘটনায় পুলিশের হটলাইনে ফোন করে যেন সর্বোচ্চ সাহায্য পান সেটি নিশ্চিত করবেন। নারী এবং শিশু নিরাপত্তা পেলে আমরা বুঝতে পারবো দেশ নিরাপত্তার দিকে অনেক দূর এগিয়ে গেছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা জানি পুলিশ বাহিনীর সামনে নানা সীমাবদ্ধতা ও চ্যালেঞ্জ রয়েছে। অপ্রতুল জনবল, লজিস্টিকস, পর্যাপ্ত বাজেট ইত্যাদি। কিন্তু আমাদের সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ হলো বিগত ১৬ বছরের পুলিশ ও জনগণের মধ্যে যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে সেই দূরত্ব কমিয়ে আনা। পুলিশ বাহিনীর প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমি বলবো এটা কঠিন না, একবার সে আন্তরিক পরিবেশ সৃষ্টি হলে এ বন্ধন অটুট থাকবে। আমাদের সমাজ যে একটা সুশৃঙ্খল সমাজ সেটা প্রমাণিত হবে। আমাদের সবাই মিলে একটা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা হবে, যেন সাধারণ মানুষ ও পুলিশ মধ্যেকার দূরত্ব আমরা ঘুচিয়ে ফেলতে পারি। মানুষ যেন পুলিশকে দেখলেই বন্ধু হিসেবে বড় করতে এগিয়ে আসে। তার প্রতি মানুষের বিরূপ মনোভাব যেন না থাকে।
মাঠ পর্যায় থেকে শুরু করে সব স্তরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে জনগণের বিশ্বাস অর্জনের জন্য কাজ করার আহ্বান জানিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এই কাজটা আপনাদেরকেই করতে হবে এবং সরকারের দিক থেকে যা যা প্রয়োজন তা বাস্তবায়ন করা আমাদের দায়িত্ব আমরা সে দায়িত্ব গ্রহণ করছি।
আমরা একটা ন্যায্যতার ভিত্তিতে গঠিত একটি বৈষম্যমুক্ত গণতান্ত্রিক নির্মাণের স্বপ্ন দেখছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা দ্বিতীয় বাংলাদেশ গঠন করার স্বপ্ন দেখছি। জুলাই গণঅভ্যুত্থান আমাদের সেই সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। এই সুযোগ যেন আমরা না হারাই। এই সুযোগ হারালে আমরা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে চিরজীবনের জন্য দায়ী থাকবো। বিশ্বের বুকে একটি শান্তিপূর্ণ-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে এবং মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে সবসময়। এই স্বপ্ন পূরণে আপনাদের ভূমিকা অনেক। পুলিশের কাজকর্ম ও পুলিশের সঙ্গে সাধারণ মানুষের সম্পর্ক এটা দেখেই সারা দুনিয়া বিচার করে যে আমরা সভ্যতার কোন পর্যায়ে আছি। আমরা সভ্যতার সর্বোচ্চ পর্যায়ে যেতে চাই, এটাই আমাদের স্বপ্ন। এই স্বপ্ন পূরণে বা বাস্তবায়নে আপনারাই একটা গুরুত্বপূর্ণ শক্তি বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী যেন গোটা বিশ্বে প্রশংসিত হয়, দেশের সব মানুষের কাছে সংস্কৃত হয় প্রশংসিত হয় সে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে আমরা ন্যায্য-অন্যায্য আন্দোলনে মানুষকে রাস্তায় নেমে আসতে দেখেছি। এসব পরিস্থিতিতে আপনারা অত্যন্ত ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন আশা করি, একই রকম ধৈর্যের পরিচয় দেবেন আগামী দিনগুলোতেও কাজ করবেন, বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
সূত্র: ঢাকা পোস্ট
এনএন/ ২৯ এপ্রিল ২০২৫